ভূমিকা: ” বৃক্ষ নেই, প্রাণের অস্তিত্ব নেই, বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান।” অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী। এই পৃথিবীকে সবুজে শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রানদায়ী বৃক্ষরাজি। এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। আবার মানুষের সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করে বৃক্ষ। তাই মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ” দাও ফিরিয়ে সে অরণ্য, লও এ নগর” – কবির এ আরতি আজ অরণ্যে রোদন এ পরিণত হয়েছে। কেননা অরণ্য দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের কুঠারের আঘাতে। এ হচ্ছে মানুষের আত্মঘাতী কর্ম।
বৃক্ষরোপণ: গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছপালা ব্যতীত পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা কঠিন। তবে গাছপালা লাগানো নয়, গাছ কাটার দিকেই আমাদের ভ্রুক্ষেপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই গাছ লাগানোর উদ্যোগ ব্যবস্থাকেই বলা হয় বৃক্ষরোপণ।
বনায়ন: বন বলতে আমরা বুঝি বৃক্ষ বা গাছপালার সমাহার. বৃক্ষরোপণ বা গাছ লাগানোর সাথে বনায়নের রয়েছে সুন্দর সম্পর্ক। কারণ, একটি থেকে দুটি করে গাছ লাগাতে লাগাতেই কিন্তু এক সময় অনেক গাছ লাগানো হয়ে যাবে। আর এভাবে গাছ লাগাতে লাগাতেই সৃষ্টি হয় বনায়নের। আর এ পদ্ধতিকেই বলা হয় বনায়ন।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল: প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্রের এ দেশে বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে বিচিত্র রূপে। বাংলাদেশের বনাঞ্চলকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ ১। ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি ২। শালবন বনভূমি ও ৩। স্রোতজ বনভূমি। চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাসমূহ ও সিলেট অঞ্চলে ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বনভূমি। ভাওয়াল ও মধুপুরের এক হাজার বর্গ কিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে শালবন। আর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিরাজমান সুন্দরবন-ই হচ্ছে স্রোতজ বনভূমি।
বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ: একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের দেশে মোট ভূমির মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমি রয়েছে যা দেশের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তবে এটি সরকারি হিসেবে, প্রকৃত- প্রস্তাবে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৯%। আর World Research Institute এর মতে ৫%। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ৩.৫%। তা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে । দেশের সময়মত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব পরিবেশ দেখা দিয়েছে গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া।
বনায়ন বা বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: World Research Institute এর মতে, বিষের বনভূমি উজাড় হতে হতে অর্ধেক এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্ব পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ ও প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের ব্যাপক আবশ্যকতা রয়েছে। তাই বৃক্ষকে মানা জীবনের ছায়া স্বরূপ বলা হয়। বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু, সে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কত যে উপকার করছে তা একবার ভেবে দেখলে অনুধাবন করা যায়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বৃক্ষই আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাদের ছাড়া এ পৃথিবীতে আমাদের জীবন যাপন অসম্ভব। জীবনের প্রায় প্রতিটি ধাপেই আমাদের রয়েছে গাছপালার প্রয়োজনীয়তা। তাই বনায়ন ও বৃক্ষ রোপন আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
জীবন ও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: বৃক্ষ জীবজগৎ কে ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বৃক্ষের ছায়া মাটির পানি কে সহজে বাষ্পে পরিণত হতে দেয় না। বিস্তৃত বনাঞ্চলের বৃক্ষ জলীয় বাষ্প কোন বায়ুকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে বৃক্ষ অক্সিজেন গ্যাস ছেড়ে দেয়, মানুষ ও অন্য প্রাণীকুল শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য গ্রহণ করে গাছপালা দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। গাছপালার জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক উৎপাদনে সাহায্য করে। গাছপালা নদীর ভাঙ্গন, বৃষ্টিপাত ও পানি-স্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে।
মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই মানবজীবনের ছায়া স্বরূপ বলা হয়। মানুষ ও পশু পাখি বৃক্ষের ফুল ফল এবং লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। বৃক্ষ সকল প্রাণীকূলের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর দেয় জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন। ফলে মানুষ এ জগতে বেঁচে থাকতে পারে। আমরা তাপ উৎপাদন, রন্ধন এবং অন্যান্য জ্বালানি কাঠ বৃক্ষ হতে পেয়ে থাকি। আসবাবপত্র, গৃহ, নৌকা, জাহাজ, বাধ,সেতু ইত্যাদি নির্মাণে বৃক্ষ আমাদের কাঠ দেয়। বৃক্ষ থেকে কাগজের মন্ড এবং রিয়ন শিল্পের কাঁচামাল ও দিয়াশলাই তৈরি হয়। বনভূমি থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়। বৃক্ষ আমাদের জীবন রক্ষায় নানা ওষুধও দান করে।
বৃক্ষরোপনের স্থান: বৃক্ষ রোপনের স্থান যে কোন জায়গায় হতে পারে। তবে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নানান কারণে নানান জায়গায় গাছ লাগালে তা মানানসই দেখায়। গাছপালা লাগানোর স্থানের অভাব নেই। গাছ লাগানো যেতে পারে আমাদের বাড়ির আঙিনায়, কিংবা বাগানের মতো করে সাজানো যেতে পারে। সেখানে থাকবে নানান শাকসবজি ও ফুলের গাছ। আবার রাস্তার দুই পাশে থাকতে পারে সৌন্দর্যবর্ধক গাছ কিংবা পাতাবাহার গাছ। এসব গাছ কিছুটা বড় হলে ভালো হয়। নদীর পাড়ে লাগানো যেতে পারে না না বড় বড় গাছ। এসব গাছের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।
গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও: গাছপালা কিন্তু শুধু মানুষ বা জীব-জন্তুর কাজে লাগে না, এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গাছপালার কারণে পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর ভারসাম্য বজায় থাকে। গাছপালা যে কোন দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। এসব জায়গায় গাছপালা বেশি থাকে সেসব জায়গায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হয় এবং প্রকৃতি সজীব থাকে। গাছপালা নদীর ভাঙ্গন, বৃষ্টিপাত ও পানি-স্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমাদের জীবন রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
বৃক্ষরোপণ অভিযান: বনজ সম্পদ কে টিকিয়ে রাখা ও এর সম্প্রসারণ এর জন্য আমাদের দেশে প্রতি বছর বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা করা হয়। সপ্তাহ,পক্ষ কাল বা মাসব্যাপী এ অভিযান চলে। এ সময় পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করা যায়। সাধারণত প্রতিবছর বর্ষাকালে সরকারের বনবিভাগের উদ্যোগে বৃক্ষরোপন অভিযান চালানো হয়। এসময় জনগণ নিকটস্থ নার্সারি থেকে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে গাছের চারা সংগ্রহ করতে পারে। অভিযান চলাকালে আমাদের জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা ও চারা রোপণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হয়। নিসন্দেহে বৃক্ষরোপন অভিযান একটি মহৎ প্রচেষ্টা।
বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করার উপায়: বৃক্ষ রক্ষা মানে আমাদের জীবন রক্ষা করা। বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বন বিভাগ বৃক্ষের চারা উৎপাদন করে বিনামূল্যে তা জনগণের নিকট সরবরাহ করবে। গাছ লাগানোর জন্য জনমত সৃষ্টি করবে। জনমতে চেতনা সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি সক্ষম মানুষ আছে। আমরা প্রত্যেকে যদি কমপক্ষে একটি করে গাছ লাগাই তাহলে সহজেই আমাদের এ অভিযান সফল হতে পারে। একটি সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য সকলকে এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হওয়া উচিত যে,” গাছ লাগাব, তাড়াবো দুঃখ। চলো সবাই গাছ লাগাই/ না হয় জীবন রক্ষা নাই।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও গৃহীত পদক্ষেপ: সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন অধিদপ্তর কর্তৃক ১৯৮২ সালে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় গৃহীত ‘ কমিউনিটি বনায়ন’ কর্মসূচি। ৭ হাজার গ্রাম কে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। ১৯৮৭-৮৮ সালে দেশের ৬১ জেলায় থানা বনায়ন ও নার্সারী উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় এবং বনায়ন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ৮০ হাজার ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আর জনসাধারণের মধ্যে ছয় কোটি চারা বিতরণ করা হয়। উপকূলীয় চরাঞ্চলে, সবকটি মহাসড়কের দুপাশে, রেল সড়কের ধারে এবং বাঁধ এলাকায় এই বনায়নে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। ১৯৯৬ সালে উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ গাছপালা লাগানো শুরু হওয়ার পর ইতোমধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বনায়ন সম্পন্ন হয়েছে। সরকার বনায়ন বৃদ্ধিতে এখন নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে।
ধরিত্রী সম্মেলন: ১৯৯২ সালের ৩ জুন থেকে ১৪ জুন ব্রাজিলের রাজধানী শহর রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত হয় পরিবেশ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন। শিল্পোন্নত দেশ সমূহ মোট ১৭০ টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বিশ্বজুড়ে যে সর্বনাশা বৃক্ষ নিধন চলছে তা এ বিশ্বকে এক কঠিন সমস্যায় ফেলবে। প্রতি সেকেন্ডে উজাড় হচ্ছে প্রায় এক একর পরিমাণ বনভূমি। এ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে একই সঙ্গে বৃক্ষনিধন ও বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে বিশ্বকে মানুষের বাসযোগ্য করে রাখতে হবে।
বন সংরক্ষণ: শুধু বৃক্ষ রোপন করলে কাজ শেষ হয়ে যাবে না। সাথে যে গাছ গুলো এখনো পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে বৃক্ষরোপনের কোন মূল্যই থাকবে না । একদিকে গাছ লাগিয়ে আরেকদিক থেকে তারা যদি কাটা শুরু হয় তাহলে তো গাছের সংখ্যা কোন ভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না। আজকাল অনেক অসাধু ব্যবসায়ী কোন অবৈধভাবে গাছ কাটছে । এসব ঘটনা ঘটছে বিশেষ করে আমাদের দেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে। সেসব অসাধু ব্যবসায়ীদের যত তাড়াতাড়ি আইনের আওতায় আনতে ,হবে নইলে এই বন ও সম্পদ দিন দিন কমতে থাকবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হলে অন্যরাও গাছপালা সংরক্ষণে সচেতন হবে। ফলে বন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং বৃক্ষরোপনের উদ্দেশ্য সফল হবে।
বনায়নের উপায়: বাংলাদেশ বনায়নের সম্ভাবনা বিপুল । নানাভাবে এ বনায়ন সম্ভব। একটি পন্থা হলো সামাজিক বন উন্নয়ন কর্মসূচি। এর লক্ষ্য হলো রাস্তার পাশে বৃক্ষ রোপনের জনসাধারণকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করানো । জনগণের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে যোগ দেশে জন্য অর্থনৈতিক প্রণোদনা থাকতে হবে। তাছাড়া নানা জাতের বৃক্ষ মিশ্রণ করে রোপণ করতে হবে যেন গ্রামবাসীরা খাদ্য, ফল, জ্বালানি ইত্যাদি আহরণ করতে পারে। এক্ষেত্রে আরেকটি বিকল্প হচ্ছে বনায়ন কর্মীদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস প্রদান করা। এছাড়া সরাসরি ঋণ ও ভর্তুকি, এবং অনুদান প্রদান, বিনামূল্যে বীজ ও চারা সরবরাহ, বনায়ন বৃক্ষায়ন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সার খাদ্য ইত্যাদি সাহায্য, ফসল ভাগাভাগি করন ইত্যাদি ব্যবস্থা করা। ওয়ার্ড মেম্বারের নেতৃত্বে এবং শিক্ষক, সমাজ কর্মী, মসজিদের ইমাম প্রমুখ এর সমন্বয়ে গঠিত গ্রাম সংস্থা এই বনায়নের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে। এই সংস্থার সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সাথে সামাজিক বনায়ন বৃক্ষ সম্পর্কিত সকল বিষয়ে তদারক করবে। গ্রামের জনসাধারণকে পরিবার ভিত্তিতে বানানোর কাজে সম্পৃক্ত করবে। যেমন- বাঁধ সড়ক, রেলপথ খালের পাড়, খাস পুকুর পাড়, খাস জমি এবং তাদের আশেপাশে যেসব পরিবার বাস করে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ পাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তার আওতায় তারা বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার ভার গ্রহণ করবে এবং এ থেকে যে আয় হবে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী সেই আয়ের অংশ তারা পাবে। এভাবে যেসব পরিবার খালি জায়গা পাহাড়-পর্বতের আশেপাশে থাকে তাদেরকে সেখানে বনায়নের সম্পৃক্ত করা হবে।
বৃক্ষহীনতার অপকারিতা: বৃক্ষ সনাতা যে কি ভয়াবহ তার জ্বলন্ত উদাহরণ আফ্রিকার অঞ্চল। বৃক্ষ ও পানিশূন্য, এলাকার মানুষ চলে গেছে অন্য এলাকায়। বাংলাদেশেওএর অশুভ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস তো লেগেই। আছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ব পরিবেশ দেখা দিয়েছে গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া ।বিশ্ব পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত ও হুমকির সম্মুখীন।
বৃক্ষের বর্তমান অবস্থা: এক সময় বৃক্ষশোভিত অঞ্চল এবং আমাদের বনাঞ্চল গুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করত । আমাদের চাহিদা পূরণ করে জীবনে স্বাচ্ছন্দ আনতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আজ আর সেই দিন নেই। বাংলাদেশের আম, কাঁঠাল, সুপারি ও নারিকেলের বাগানের পরিসর ক্রমেই সংকীর্ণতর হতে হতে প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে। মানুষ গাছ কাটছে ঠিকই কিন্তু গাছ লাগানোর দিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। বৃক্ষ থেকে আজ মানুষের বাড়ি গাড়ির মূল্য বেশি। গাছ গাছ লাগানোর বদলে যেসব গাছ আগে ছিল। সেসব গাছ কেটে সাফ করে সেখানে তৈরি হচ্ছে বড় বড় দালান কোঠা ও ইমারত। তাই বর্তমান বিশ্বে বৃক্ষের অবস্থা খুবই করুন যার ফলে মানুষ ক্রমিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
বৃক্ষ সংরক্ষণে করণীয়: বিভিন্ন প্রকার শিল্পের উপকরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সীমাহীন প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বৃক্ষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা। দেশের অর্থনীতিও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের অন্তত দুটি করে বৃক্ষরোপণ করা দরকার।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস